ভেক্সিন কেন বাজারে আসেনা?এত দেরি কেন?
কোভিড-১৯ এর ভেক্সিনের জন্য পুরো পৃথিবীর মানুষ ঝিম মেরে অপেক্ষা করছে। যখনি পত্রিকাতে ভেক্সিন সংক্রান্ত কোন পোস্ট পাচ্ছে মানুষ প্রবল আগ্রহে তা পড়ে ফেলছে।ফেইসবুক হোমে ভেক্সিনের কোন খবর দেখলেই তা প্রচুর শেয়ার দিচ্ছে। অনেকে আবার শেয়ার দিতে দিতে ক্লান্ত এবং ক্ষিপ্ত। অনেকে এখন ভেক্সিন আসছে এই খবর শুনলে হাসে। কিছু মানুষ ভেক্সিনের কথা শুনলেই বলে "বাদ দেন তো ভেক্সিনের কথা!পরিস্কার ভেক্সিন আসবে বলে অপেক্ষা করতে করতে আমরা ক্লান্ত,শ্রান্ত এবং কিছুটা রাগান্বিত হয়!আসলে আমাদের রাগের মূল কারণ আমরা ভেক্সিন আবিস্কারের প্রক্রিয়া সম্পর্কে মোটামুটি অজ্ঞ এবং পত্রিকা গুলোও পরিস্কার ভাবে কিছু লিখেনা।প্রক্রিয়াটি সম্পর্কে জানলে হয়তো আমরা কিছুটা হতাশ হব কিন্তু আশায় বুক বাঁধতে বাঁধতে আমরা রাগান্বিত হব না! নিচে ভেক্সিন আবিস্কারের প্রক্রিয়া সম্পর্কে সাধারণ আলোচনা করবো। এটা কোন একাডেমিক আলোচনা নয়। খুবেই সাধারণ ভাবে প্রক্রিয়াটি বলার চেষ্টা মাত্র। যাতে আমরা পত্রিকায় যা পড়ি সেটা সম্পর্কে একটা ধারণা মাথায় রাখতে পারি।
কোন জীবানুর ভেক্সিন আবিস্কার করতে আসলে স্বাভাবিক নিয়মেই প্রায় বছর দশ/বারো লাগে কিন্তু এখন যেহেতু বিশেষ প্রয়োজন, তাই ভেক্সিন বানানোর সময় অনেক কমিয়ে আনা হয়েছে যতটুকু সম্ভব। কিন্তু তারপরেও কিছু ধাপ অবশ্যয় বিজ্ঞানিদের মেনে চলতেই হবে।
প্রথমে একটা জীবাণু নিয়ে গভীর গবেষনা হয়।গবেষণা করে জীবাণুটির জিন,ধরণ,ক্ষতি করার অঙ্গ ইত্যাদি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা নেওয়া হয়। সাধারনত যে জীবানুর ভেক্সিন বানানো হবে সেই জীবাণুটিকেই তিন প্রক্রিয়ায় প্রসেস করে ভেক্সিন বানানো হয়।
১. জীবানুটিকে দুর্বল করে
২. জীবাণুটিকে প্রায় মৃত করে এবং
৩. জীবাণুটির ক্ষতি করার ক্ষমতা কমিয়ে।
একেই জীবানু দিয়েই কেন ভেক্সিন বানানো হয়??
সেটা বুঝতে হলে আমাদের শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে একটু জানতে হবে। আমাদের শরীরে কোন জীবানু ঢুকলে শ্বেত রক্তকণিকা নামক প্রতিরক্ষা কর্মীরা ছুটে আসে। এসে এরা জীবাণুর সাথে যুদ্ধ শুরু করে জীবাণুকে মেরে ফেলে।আর যদি এই যুদ্ধে শ্বেত রক্তকণিকা হেরে যায় তাহলে জীবানু শরীরের ক্ষতি করে বা মানুষকে মেরে পর্যন্ত ফেলতে পারে। তো,শ্বেত রক্তকণিকা যুদ্ধে টিকে গেলে। এই যুদ্ধে এমন একটা পদার্থ তৈরী হয় যাকে এন্টিবডি বলে। এই এন্টিবডি পরবর্তীতে শরীরে একেই জীবাণু আবার ঢুকলে তাকে কাজ করতে না দিয়ে মেরে ফেলে বা বাধা দেয়। তো,যদি এমন ব্যবস্থা করা হয় জীবাণুটি শরীরে ঢুকানো হবে কিন্তু এটার ক্ষতি করার কোন ক্ষমতা থাকবে না!! তাহলে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় শ্বেত রক্তকণিকা ছুটে আসবে,যুদ্ধ হবে,এন্টিবডি তৈরি হবে কিন্তু শরীরের কোন ক্ষতি হবেনা।
যখন এই নিস্ক্রিয় জীবাণু পোষকের শরীরে ঢুকানো হবে এন্টিবডি তৈরি হবে তখন বিজ্ঞানীরা মনে করেন এই ভেক্সিন তাহলে ক্ষুদ্র কোন প্রাণী শরীরে মেরে দেখি তো!
ধরে আনা হয় খরগোশ। মেরে পজিটিভ ফল পাওয়া গেলে অনেক সময় বড় প্রাণিতেও পুশ করে দেখা হয়, যেমন গোরু।
সেখানে সফল হলে ফ্রেজ-১ ক্লিনিকাল ট্রাইয়ালে যাওয়া হয় এই শব্দ আমরা খুব বেশি পত্রিকায় দেখি ।
এই ট্রায়াল করা হয় মানুষের উপর, অন্তত ছয়জন মানুষের উপর। এই ট্রায়াল থেকে ডোজ সম্পর্কে ধারণা নেওয়া হয়।
এরপর আসে ফ্রেজ-২ ট্রায়াল। এখানে মানুষের সংখ্যা বাড়িয়ে ১০০/২০০ করা হয়। এখানে দেখা হয় এই ভ্যাক্সিনের কোন পাশ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কিনা। সেখানে সফল হলে করা হয় ফ্রেজ-৩ ট্রায়াল। এবার সংখ্যাটা বাড়িয়ে হাজার করা হয়। এই ধাপে দেখা হয় এমন সব পাশ্বপ্রতিক্রিয়াকে যা ফ্রেজ দুইয়ে ধরা পড়েনি। খুবেই রেয়ার সব পাশ্বপ্রতিক্রিয়া অনুসন্ধান করা হয় এই ফ্রেজে। এই ধাপে মানুষ গুলোকে মুক্ত পরিবেশে ছেড়ে দিয়ে দেখা হয় আমজনগণের সাথে মিশে তারা আক্রান্ত হচ্ছে কিনা বা কোন সূক্ষ্ম পাশ্বপ্রতিক্রিয়া তাদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে কিনা!
বিশ্বের অনেক গুলো ভ্যাক্সিন এখন এই ধাপে আছে। চীনের ভেক্সিনটি আমাদের দেশে এই ধাপের পরিক্ষা চালানোর অনুমতি পেয়েছে। আর অক্সফোর্ডের ভেক্সিনটি এই ধাপ পার করেছে।
এটিয়েই প্রক্রিয়াগত ভাবে শেষ ধাপ। এর পর ম্যানুফাকচারিং করে ভেক্সিন বাজারে ছাড়া হয় কিন্তু ভেক্সিনের ক্ষেত্রে শেষ কথা বলে কিছু নেই। বাজারে ছেড়েও বিজ্ঞানিরা এর পাশ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে পূর্ণ সতর্ক থাকে। এটাকে অনেকে ফ্রেজ- ৪ ট্রায়াল বলে। বাজারে ছাড়ার পর যদি দেখে যায় যে এর কোন পাশ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছেনা তাহলে মোটামুটি সবাই নিশ্চিত হয় যে, ভেক্সিনটি এই রোগের জন্য নির্ধারিত।
তবে মনে রাখবেন। প্রায় দশ বছরের প্রক্রিয়া কমিয়ে কোভিড-১৯ এর জন্য প্রায় ৭/৮ মাসে নামিয়ে আনা হয়েছে। এখন প্রশ্ন হতে পারে কত মানুষ ভেক্সিন নিলে এই রোগ পৃথিবী থেকে চলে যাবে বা মানুষের মৃত্যুর হার কমে আসবে। ধারণা করা হয় ৬০-৭০% মানুষ পৃথিবীতে ভেক্সিন নিলেই একটা রোগ পৃথিবী থেকে মোটামুটি নির্মূল হয়ে যেতে পারে।
এই হল মোটামুটি ভেক্সিনের ইতিবৃত্ত। আসুন,আমরা সবাই আল্লাহর কাছে দোয়া করি যেন এই ভেক্সিন গুলো ফ্রেজ-৪ পর্যন্ত কার্যকর থাকে। আবার যেন পৃথিবী সুন্দর হয়ে উঠে।
কোন জীবানুর ভেক্সিন আবিস্কার করতে আসলে স্বাভাবিক নিয়মেই প্রায় বছর দশ/বারো লাগে কিন্তু এখন যেহেতু বিশেষ প্রয়োজন, তাই ভেক্সিন বানানোর সময় অনেক কমিয়ে আনা হয়েছে যতটুকু সম্ভব। কিন্তু তারপরেও কিছু ধাপ অবশ্যয় বিজ্ঞানিদের মেনে চলতেই হবে।
প্রথমে একটা জীবাণু নিয়ে গভীর গবেষনা হয়।গবেষণা করে জীবাণুটির জিন,ধরণ,ক্ষতি করার অঙ্গ ইত্যাদি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা নেওয়া হয়। সাধারনত যে জীবানুর ভেক্সিন বানানো হবে সেই জীবাণুটিকেই তিন প্রক্রিয়ায় প্রসেস করে ভেক্সিন বানানো হয়।
১. জীবানুটিকে দুর্বল করে
২. জীবাণুটিকে প্রায় মৃত করে এবং
৩. জীবাণুটির ক্ষতি করার ক্ষমতা কমিয়ে।
একেই জীবানু দিয়েই কেন ভেক্সিন বানানো হয়??
সেটা বুঝতে হলে আমাদের শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে একটু জানতে হবে। আমাদের শরীরে কোন জীবানু ঢুকলে শ্বেত রক্তকণিকা নামক প্রতিরক্ষা কর্মীরা ছুটে আসে। এসে এরা জীবাণুর সাথে যুদ্ধ শুরু করে জীবাণুকে মেরে ফেলে।আর যদি এই যুদ্ধে শ্বেত রক্তকণিকা হেরে যায় তাহলে জীবানু শরীরের ক্ষতি করে বা মানুষকে মেরে পর্যন্ত ফেলতে পারে। তো,শ্বেত রক্তকণিকা যুদ্ধে টিকে গেলে। এই যুদ্ধে এমন একটা পদার্থ তৈরী হয় যাকে এন্টিবডি বলে। এই এন্টিবডি পরবর্তীতে শরীরে একেই জীবাণু আবার ঢুকলে তাকে কাজ করতে না দিয়ে মেরে ফেলে বা বাধা দেয়। তো,যদি এমন ব্যবস্থা করা হয় জীবাণুটি শরীরে ঢুকানো হবে কিন্তু এটার ক্ষতি করার কোন ক্ষমতা থাকবে না!! তাহলে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় শ্বেত রক্তকণিকা ছুটে আসবে,যুদ্ধ হবে,এন্টিবডি তৈরি হবে কিন্তু শরীরের কোন ক্ষতি হবেনা।
যখন এই নিস্ক্রিয় জীবাণু পোষকের শরীরে ঢুকানো হবে এন্টিবডি তৈরি হবে তখন বিজ্ঞানীরা মনে করেন এই ভেক্সিন তাহলে ক্ষুদ্র কোন প্রাণী শরীরে মেরে দেখি তো!
ধরে আনা হয় খরগোশ। মেরে পজিটিভ ফল পাওয়া গেলে অনেক সময় বড় প্রাণিতেও পুশ করে দেখা হয়, যেমন গোরু।
সেখানে সফল হলে ফ্রেজ-১ ক্লিনিকাল ট্রাইয়ালে যাওয়া হয় এই শব্দ আমরা খুব বেশি পত্রিকায় দেখি ।
এই ট্রায়াল করা হয় মানুষের উপর, অন্তত ছয়জন মানুষের উপর। এই ট্রায়াল থেকে ডোজ সম্পর্কে ধারণা নেওয়া হয়।
এরপর আসে ফ্রেজ-২ ট্রায়াল। এখানে মানুষের সংখ্যা বাড়িয়ে ১০০/২০০ করা হয়। এখানে দেখা হয় এই ভ্যাক্সিনের কোন পাশ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কিনা। সেখানে সফল হলে করা হয় ফ্রেজ-৩ ট্রায়াল। এবার সংখ্যাটা বাড়িয়ে হাজার করা হয়। এই ধাপে দেখা হয় এমন সব পাশ্বপ্রতিক্রিয়াকে যা ফ্রেজ দুইয়ে ধরা পড়েনি। খুবেই রেয়ার সব পাশ্বপ্রতিক্রিয়া অনুসন্ধান করা হয় এই ফ্রেজে। এই ধাপে মানুষ গুলোকে মুক্ত পরিবেশে ছেড়ে দিয়ে দেখা হয় আমজনগণের সাথে মিশে তারা আক্রান্ত হচ্ছে কিনা বা কোন সূক্ষ্ম পাশ্বপ্রতিক্রিয়া তাদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে কিনা!
বিশ্বের অনেক গুলো ভ্যাক্সিন এখন এই ধাপে আছে। চীনের ভেক্সিনটি আমাদের দেশে এই ধাপের পরিক্ষা চালানোর অনুমতি পেয়েছে। আর অক্সফোর্ডের ভেক্সিনটি এই ধাপ পার করেছে।
এটিয়েই প্রক্রিয়াগত ভাবে শেষ ধাপ। এর পর ম্যানুফাকচারিং করে ভেক্সিন বাজারে ছাড়া হয় কিন্তু ভেক্সিনের ক্ষেত্রে শেষ কথা বলে কিছু নেই। বাজারে ছেড়েও বিজ্ঞানিরা এর পাশ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে পূর্ণ সতর্ক থাকে। এটাকে অনেকে ফ্রেজ- ৪ ট্রায়াল বলে। বাজারে ছাড়ার পর যদি দেখে যায় যে এর কোন পাশ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছেনা তাহলে মোটামুটি সবাই নিশ্চিত হয় যে, ভেক্সিনটি এই রোগের জন্য নির্ধারিত।
তবে মনে রাখবেন। প্রায় দশ বছরের প্রক্রিয়া কমিয়ে কোভিড-১৯ এর জন্য প্রায় ৭/৮ মাসে নামিয়ে আনা হয়েছে। এখন প্রশ্ন হতে পারে কত মানুষ ভেক্সিন নিলে এই রোগ পৃথিবী থেকে চলে যাবে বা মানুষের মৃত্যুর হার কমে আসবে। ধারণা করা হয় ৬০-৭০% মানুষ পৃথিবীতে ভেক্সিন নিলেই একটা রোগ পৃথিবী থেকে মোটামুটি নির্মূল হয়ে যেতে পারে।
এই হল মোটামুটি ভেক্সিনের ইতিবৃত্ত। আসুন,আমরা সবাই আল্লাহর কাছে দোয়া করি যেন এই ভেক্সিন গুলো ফ্রেজ-৪ পর্যন্ত কার্যকর থাকে। আবার যেন পৃথিবী সুন্দর হয়ে উঠে।
0 Comments